আমরা মানুষ। মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব জ্ঞান আছে, বুদ্ধি আছে, জগৎ-জীবন সম্পর্কে নিজস্ব ধারণা আছে। নিজস্ব মত আছে।
আমার যেমন নিজস্ব মত আছে, তেমনি অন্যেরও নিজস্ব মত আছে। কিন্তু সাধারণত আমরা আমাদের নিজ নিজ মতকেই বড় করে দেখি। অন্যের মতের গুরুত্ব দিই না। অন্যের মত উপেক্ষা করি। আর এর ফলে আমাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। বিরোধ হানাহানি পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু আমরা যদি অন্যের মতের সারবত্তা বুঝে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি তাহলে কোনো বিরোধ ঘটে না। বরং সকলের মঙ্গল হয়।
এই যে অন্যের মতকে শ্রদ্ধা করা, অন্যের মতের প্রতি সহনশীল হওয়া, একেই বলে পরমতসহিষ্ণুতা।
পৃথিবীতে অনেক মত, অনেক পথ আছে। ধর্মপালনের ক্ষেত্রেও নানা মত ও পথের সৃষ্টি হয়েছে। সকল মত ও পথকে, সকল ধর্মকে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে পরমতসহিষ্ণুতা প্রকাশ পায়। প্রতিষ্ঠিত হয় সম্প্রীতি।
শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব খুব সহজ করে বলেছেন: যত মত, তত পথ। উপাস্যের নাম এবং উপাসনা ও জীবনাচরণের পদ্ধতির মধ্যে বিশিষ্টতা বিভিন্ন ধর্মমতের উদ্ভব ঘটিয়েছে। আসলে উদ্দেশ্য সকলেরই এক। তা হচ্ছে স্রষ্টার কৃপা লাভ এবং জীব ও জগতের কল্যাণ।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন-
যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্।
মম বানুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ ॥(৪/১১)
অর্থাৎ যে যেভাবে বা যেরূপে আমাকে উপাসনা করে, আমি তাকে সেভাবেই সন্তুষ্ট করি। হে পার্থ (অর্জুন), মানুষেরা সকল প্রকারে আমার পথেরই অনুসরণ করে।
পরমতসহিষ্ণুতা সমাজের শৃঙ্খলার অন্যতম উপাদান। পরের মতকে স্বীকৃতি না দিলে এক মতের সাথে অন্য মতের বিরোধ অনিবার্য হয়ে উঠবে। কেবল নিজের ধর্মমতকে শ্রেষ্ঠ মনে করলে, অন্য ধর্মমতের অনুসারীদের খাটো করা হবে।
এ রকম মতান্ধতা জন্ম দেয় ধর্মান্ধতার। আর ধর্মান্ধতা পরিণত হয় গোঁড়ামিতে- হিংস্র সাম্প্রদায়িকতায়। সুতরাং ব্যক্তিজীবন, সমাজজীবন ও রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে পরমতসহিষ্ণুতা একটি গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক গুণ, ধর্মেরও অঙ্গ।
একক কাজ: সহিষ্ণুতা প্রদর্শনের পাঁচটি ক্ষেত্র চিহ্নিত কর। |